WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

Monday, April 13, 2015


ছোটবেলার পহেলা বৈশাখের দিনগুলো আজও পিছু ডাকে আমায়                                                                                                           - সুফিয়া বেগম, কথা সাহিত্যিক


বৈশাখ মানেই বাঙালীবাঙালীর চিরায়ত সংস্কৃতি মানেই পহেলা বৈশাখবৈশাখ মানেই একরাশ হতাশা আর ব্যর্থতার পাহাড় ডিঙিয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বাঙালীর ভেসে যাওয়াগ্রাম থেকে শহর-প্রান্তরের প্রতিটি আনাচে-কানাচে বৈশাখের আগমনে প্রাণের জোয়ার জাগে বাঙালীর জীবনেশহর কিংবা গ্রাম যে কোন পটভূমিতে আমাদের দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ভিন্ন মাত্রিক আঙ্গিকতা পরিলতি হলেও প্রাণের উন্মাদনা সবার জন্য একদিন বদলের সাথে সাথে আধুনিকতার হাত ধরে অনেক পরিবর্তন এসেছে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উদযাপনেতবে শহুরে সভ্যতার বর্ণিল ছোঁয়া তেমন করে গ্রাস করে নিতে পারেনি গ্রামীণ আটপৌরে জীবনের বৈশাখী আয়োজনকেআজও আমাদের গ্রামাঞ্চলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয় বিশ/তিরিশ বছর আগেকার পুরাতন গতিময়তায়

রাজধানী ঢাকাসহ প্রধান প্রধান নগরগুলোতে প্রতি বছর নানা বর্ণিল আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়প্রাণের টানে বয়সের পিছুটানকে উপো করে প্রতি বছর চেষ্টা করি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেকিন্তু ছোটবেলায় আব্বার হাত ধরে বটতলায় বা নদীর তীরের বৈশাখী মেলায় যাবার স্মৃতি কিছুতেই ভুলবার নয়ঢাকায় বৈশাখ উদযাপনের সব বর্ণাঢ্য আয়োজন যেন এর কাছে ম্লান হয়ে যায়তাই বৈশাখের আগমন মুহূর্তে আমার ভিতর স্মৃতির পাপড়িরা ডানা মেলতে শুরু করেভুলতে পারিনা চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন থেকে মা-চাচী-দাদীদের ব্যস্ততার কথাবৈশাখকে ঘিরে তখনকার আটপৌরে গ্রামীণ জীবনের ভিতর বাড়ির দৃশ্য ছিল এমনিমা-চাচীরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন চৈত্র সংক্রান্তির দিন আর পহেলা বৈশাখের দিনের খাবার আয়োজন নিয়েচৈত্র সংক্রান্তির দিনে সব ধরনের শাক খাওয়ার রীতিটা ছিল বহুদিনের প্রচলিত প্রথাবিগত বছরের সমস্ত জরা-ব্যধি দূর হয়ে যাবে-এই বিশ্বাসে প্রচলিত-অপ্রচলিত সব ধরনের শাকের সমাহার ঘটত চৈত্র সংক্রান্তির দিনের দুপুরের খাবারেতার সাথে চলত ঘর-বাড়ি ঝাড়-মোছের কাজবিদায়ী বছরের সমস্ত ধুলো-বালি-ময়লা-আবর্জনা দূর করে ঝকঝকে-তকতকে করে তোলা হতো বাড়িঘরযাতে বৈশাখের আগমন ঘটে সূচী-শুভ্র-পবিত্রতার মধ্য দিয়ে

মা-চাচীদের এই ধরনের আয়োজন আমাদের অর্থাৎ ছোটদের মনে বৈশাখকে ঘিরে বাড়তি উদ্দীপনা জাগিয়ে দিতপরের দিন পহেলা বৈশাখবাংলা বছরের প্রথম দিনজমবে বৈশাখী মেলাএর আগাম আনন্দবার্তা নিয়ে আসত চৈত্র সংক্রান্তির দিনটিসারারাত উদ্দীপনায় আমাদের ঘুম হতোনাযেমনটি হতো চাঁদ রাতের বেলায়অপোয় থাকতাম কখন রাত পোহাবেবৈশাখী মেলায় যাবহাতি-ঘোড়া-পুতুল কিনবসবচেয়ে মজা পেতাম খাওয়ার হাতি-ঘোড়া কিনতে পেরেআমাদের দেশে এগুলোকে বলে সাজিসাজি কিনতে না পারলে মনে হতো মেলায় যাওয়াটাই বৃথা গেলসাথে কিনতাম বিন্নি ধানের খৈআর কিনতাম মাটি দিয়ে বানানো রং বেরং এর পুতুল, বাঁশী, আরও নানা ধরনের খেলনা

বৈশাখের সকাল বেলাতেই রান্নাঘরে দেখতাম আম্মার অন্যরকম ব্যস্ততানানা রকম পিঠে দিয়ে নাস্তা হবেএখনকার মতো সকালবেলা পান্থা-ইলিশ দিয়ে নাস্তা খাওয়ার রীতি গ্রামে তখনও ছিলনা, এখনও নেইনাস্তার পর দুপুরের খাবারের আয়োজনে লেগে যেতেন আম্মাকারণ, পহেলা বৈশাখের দিনের দুপুরের খাবার অন্যদিনের মতো গতানুগতিক হলে চলত নাসাধ্যমতো বছরের প্রথম দিনটিতে ভালো ভালো খাবারের আয়োজন চলত ঘরে ঘরেবিশ্বাস এই যে, পহেলা বৈশাখের দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছর এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবেঅভাব আর দারিদ্রের নিস্পেষণে জর্জড়িত গ্রাম বাংলার মানুষের এই বিশ্বাস কতটুকু ফলপ্রসূ হতো তা আজও জানার বাইরে রয়ে গেছেতবে আজও গ্রামের মানুষ এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে আছে বৈশাখী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেআজকাল যেমন শহরে পহেলা বৈশাখ উপলে নতুন কাপড় পড়ার প্রচলন দেখতে পাই তখনকার দিনে গ্রামাঞ্চলে তো বটেই শহরেও এমনটি ছিলনাআমাদের গ্রামাঞ্চলের সেই আবহ এখনও বজায় থাকলেও পাল্টে গেছে শহুরে আনুষ্ঠানিকতাআমরাও কখনও পহেলা বৈশাখ উপলে নতুন পোশাকের জন্য বায়না ধরতাম নাআব্বা আমাদের চাহিদামতো সব ধরনের খেলনাপাতি ও খাবার জিনিস কিনে দিতেনতাই নিয়ে খুশীতে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরতাম আমরাবাড়ি আসার পথে সেই কি দৃশ্য! চোখের পর্দায় এখনও লেগে আছে যেনমেলাফেরত মানুষের মিছিলসব বাচ্চাদের হাত ভর্তি জিনিসপত্রবাঁশীর প্যাঁ পোঁ শব্দে মুখর হয়ে উঠত চারপাশবাড়ি ফিরেই বসে পড়তাম কার কোন খেলনাটা কত সুন্দর হয়েছে সেটা ঠিক করতে

চাকুরীর ব্যস্ততার কারণে মাঝে মাঝে আব্বা নববর্ষের দিন বাড়ি আসতে পারতেন নাতখন বাড়ির অন্যদের সাথে মেলায় যেতাম আমরাআম্মা দশ টাকা করে দিতেন আমাদেরকেহাতে টাকা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তাম নিজে নিজে পছন্দের জিনিস কিনতে পারব বলেকত জিনিস যে কেনা যেত তখন দশ টাকায়! এখন ভাবলেও অবাক লাগেমেলায় গেলে আর বাড়ি ফিরে আসতে ইচ্ছে করত নামনে হতো মেলাটা যদি আরও কিছুদিন থাকত তাহলে খুব মজা হতোপ্রতিদিন মেলায় যেতে পারতামছোট্র মনে কেবলই প্রশ্ন জাগত এত সুন্দর সুন্দর জিনিস নিয়ে কোথা থেকে আসে লোকগুলো? আবার কোথায় চলে যায় ? না গেলে কি হয় ?

আজ বহুদূর ফেলে এসেছি সেই পহেলা বৈশাখের দিনগুলোআমার মা-বাবা কেউ বেঁচেও নেইকিন্তু মহাকালের চিরায়ত নিয়মে আজও বৈশাখ আসেনববর্ষের উদ্দীপনায় মেতে উঠি আমরাশহরের কোলাহল মুখর ব্যস্ততায় আমার মা-চাচীদের আটপৌরে আয়োজনে উদযাপিত পহেলা বৈশাখের দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পারিনাভুলতে পারিনা সেই বটতলার কথা, নদী তীরের কথাআমার কানে আজও বাজে সেই বাঁশীর সুরবৈশাখী মেলা থেকে কিনে যে বাঁশীর সুরে চারদিক মাতিয়ে তুলতাম আমরাআজ মনে হয় আমার প্রাণের নির্মল উচ্ছাসটুকু জড়িয়ে আছে বাঁশীর সেই সুরের সাথেতাই বৈশাখের আগমন মুহূর্তে ছোটবেলার কথা স্মরণ করে বুকের ভিতর অন্যরকম ভালো লাগার অনুভবে আজও আলোড়িত হই আমিআমার বুকের ওমে পরম আদরে পুষে রাখা সুখের ছোট্র সুখপাখী এটিআমৃত্যু আমার মনে সুখের সরোবর হয়ে বেঁচে থাকবে