WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

Thursday, June 11, 2015


মিছিলের সেই যুবক   
                      সুফিয়া বেগম
লাশের মিছিল থেকে উদ্যত অস্ত্রহাতে
ছুটে আসে সে,
সুতীব্র চীৎকারে একাকার করে দেয়
গ্রাম-মাঠ-জনপদ-ব্যস্ত শহর
ছুটে আসে সবাই তার ডাকে
ক্ষেতের কৃষক,
কারখানার মজুর,
রাস্তার পথিক,
স্কুলগামী ছাত্র,
ঘরকুনো গৃহিণী,
সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগী
সেও ছুটে আসে
সবাই গোল হয়ে জমা হয়
মাঝখানে লাশের মিছিলের সেই ছেলেটি
উদ্যত পতাকা তখনও তার হাতে
ছেলেটি চীৎকার করে বলছে,
আমাকে তোমরা কবর দিতে চেয়েছিলে না ?
এই দেখো, আমি চলে এসেছি
আমি কবরে যাবনা, যেতে পারিনা
এই তোমরা না একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলে ?
এখনই এতটা বধির হয়ে গেলে কি করে ?’
গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো
একে অপরের মুখের দিকে তাকায়
আরও মানুষ জমা হতে থাকে সেখানে
কোন ঔষধ বিক্রেতার সমাবেশ মনে করে
ততক্ষণে ছেলেটির শরীর থেকে খসে পড়েছে
সাদা থানের টুকরোগুলো
তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে ঝলমলে রঙিন পোষাক
অবাক হয় সবাই, একি !
ছেলেটি সেই পোষাক দেখিয়ে আবার বলে,
এই দেখো, আমি মরিনি
তোমরা ভুল করেছিলে
তোমাদের সেই ভুল ভাঙাতেই আমি ছুটে এসেছি

এই পতাকা দেখো
এটা কি কোনদিন মাটিচাপা পড়তে পারে ?
আমি এই পতাকাকে ধরে আছি
সেই একাত্তর থেকে
যখন তোমরা যুদ্ধ করেছিলে স্বাধীনতার জন্য
বিসর্জন দিয়েছিলে অগণিত প্রাণ,
নারীর ইজ্জত,
বুদ্ধিজীবীদের কলমের শাণিত অস্ত্র
তার বিনিময়ে এই পতাকা
এই দেখো, ছুটে এসেছি আমি মৃত্যুর মিছিল থেকে
তোমাদেরকে জানাব বলে, যে
এই পতাকা শুধু লাল-সবুজের আলপনা নয়
এতে মিশে আছে আমাদের জাতিসত্তার চেতনা
যা কেবল গর্জে উঠতে জানে
মাথা নোয়াতে জানেনা  

Saturday, May 2, 2015


সময়ের শ্রেষ্ট মারণাস্ত্র
                               -সুফিয়া বেগম

তোমার কলমে উচ্চারিত হোক
সময়ের শ্রেষ্ট কথামালা
থোকায় থোকায় ঝরে পড়ক ওরা,
তৈরি করুক প্রতিবাদী শব্দমালা
অন্ধ-মুক-বধির যত
জীবনের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত,
যাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে
মুখ থেকে রুটির টুকরো ছিনিয়ে নেয়ার মতো
তাদের মুখে আমি তুলে দিতে চাই
সেই সব শব্দের কথামালা
ওদের ঝিমিয়ে পড়া শরীরে
শক্তির আগ্নেয়গীরির মতো
প্রতিবাদী স্ফুরনে জ্বলতে জ্বলতে
এই শব্দগুলো একদিন দাবানল হয়ে
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে
ক্ষমতার আকাশচুম্বী পাহাড় যত
সেখানে তোমার প্রতিবাদী কথাগুলো হবে
সময়ের শ্রেষ্ট মারণাস্ত্র
তাই তো তোমাকে তৈরি করতে হবে
সময়ের শ্রেষ্ট কথামালা
আমি চাই, তোমার কলমে উচ্চারিত হোক
সময়ের সাহসী কথামালা
আমি তোমার কাছ থেকে ধার নিব সেই কথামালা
সেই কথাগুলোকে কন্ঠে ধরে
প্রচন্ড গর্জনে
শ্লোগানে  শ্লোগানে 
বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ে
তৈরি করব আন্দোলনের নতুন স্রোতধারা,
ওদের বিরুদ্ধে, যারা
রুটির টুকরোর মতো 
চর্বিত চর্বণে
গিলে ফেলেছে সমাজের সব নীতিমালা
আমি তাই চাই
মানুষে মানুষে তৈরি হোক
কথার বিনিময় মালা
তোমার কলমে উচ্চারিত হোক সেই কথামালা  
                                   

Tuesday, April 21, 2015

সুখমন
               - সুফিয়া বেগম

বাজান তোমারে ডাকতাছে
কেলা ডাহে ?
জেডায়
ডাহে কেরে ?
আমি কইতাম পারতাম না
তুই গিয়া ক আমি অহন যাইতারতাম না, কাম আছে
আমি পারতাম না
পারতিনা কেরে ?
আমি জেডারে ডরাই
দুহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দেয় মবিনজয়নাল হাতের কাজ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলের কাছে এসে বলে
যেডা কইছি হেইডা করগা
আমি পারতাম না
আবারও একই কথা বলে মবিনছেলের কথায় এবার রাগ চড়ে যায় জয়নালের মাথায়সে জোড়ে একটা চড় বসিয়ে দেয় মবিনের গালেতারপর বলে
বেশী তেড়ামী করবিনা কইলাম মবিনতাইলে কিন্তুক গাট্টা খাইবি
মবিন তেমনি জবাব দেয়
তোমার হগল বেডাগিরী ত আমার লগেজেডার কাছে গিয়া ত খালি কু কু করজেডা তোমারে কামে-অকামে বকাবাদ্য করে তহন ত কিচ্চু কইতে পারনা
হেইডা আমি বুঝবামতুই অহন মিয়া ভাইরে গিয়া ক আমি আতের কামডা সাইরা একটু পরে আইতাছি
এরপর আর কোন কথা বলেনা মবিনদুপদাপ পা ফেলে সেখান থেকে চলে যায়জয়নাল আবার ক্ষেতে গিয়ে চেনি হাতে বসে পড়ে
আইজ যেমনেই অউক বাছ বাছার কামডা শেষ করন লাগবএইনি মাত্র জাগাহেইডাও যদি ঠিকমত চাষবাস করতে না পারি তাইলে খামু কি কইরাকামে আত দিলেই খালি বাগড়া আর বাগড়া
সারি সারি মরিচ গাছের ফাঁকে চেনি চালাতে চালাতে নিজের মনে গজরাতে থাকে জয়নালএমন সময় মবিন আবার সেখানে আসেবলে
বাজান, জেডায় তোমারে অহনই যাইতে কইছে
ধ্যাত ছাতা ! বলে উঠে দাঁড়ায় জয়নালহাতের চেনিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হন হন করে হাঁটতে থাকে বাড়ির দিকেমবিন ওর বাবার গমন পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেতারপর ক্ষেতে গিয়ে জয়নালের ছুঁড়ে ফেলা চেনিটা খুঁজে বের করে অপক্ক হাতে নিড়ানি দিতে শুরু করে
জয়নাল দ্রুত বাড়ির ভিতর এসে উঠোন পেরিয়ে বেলালের ঘরের বারান্দায় গিয়ে বলে
মিয়া ভাই, কি কইবা কওআমার আতে মেলা কামতোমার পেঁচাল হুনার অত সময় নাই 
বেলাল একটু অবাক হয় জয়নালকে এভাবে কথা বলতে দেখেমনে মনে বলে, কি অইল আজ ছেড়াডার ? অমন কইরা কতা কইতাছে কেরে ?
এই ফাঁকে জয়নাল আবার তাড়া দেয়
মিয়া ভাই, কওনা কি কইবা ? আমি মরিচ ক্ষেতে চেনি ফালাইয়া আইছিআইজ মরিচ ক্ষেতের বাছনডা শেষ করতে না পারলে চলব নামরিচ ক্ষেতডা আমার নষ্ট অইয়া যাইতাছে
হেইডা আমিও বুঝিরে জয়নালতর এক নিমিষ জিরানের যোগাড় নাইআয়, আমার বারাত একটু বপরে কইতাছিতুই উশারায় খাড়াইয়া থাকলে কতা কই কেমনে ?
তোমার কি অমন লুকাইনা কতা যে বারাত আইয়া হুনন লাগব ?
বলতে বলতে বারান্দা ছেড়ে ঘরে গিয়ে বেলালের পাশে চৌকির উপর পা ঝুলিয়ে বসে জয়নালবেলাল শুয়া থেকে কনুই এ ভর করে উঠে বসে কুখ কুখ করে দুই/তিনবার কাশেতারপর ফিসফিস করে বলে,
তর ভাবি কইতাছিল -----
বেলাল এটুকু বলতেই জয়নাল প্রায় গর্জে উঠেকারণ, বেলালের বউ রহিমার প্রসংগটি তার কাছে বড়ই বিরক্তিকরএবাড়ি-ওবাড়ির কথা কুটচাল না করলে রহিমার যেন পেটের ভাত হজম হয়নাআর বেলালও হয়েছে তেমনিসারাক্ষণ বিছানায় পড়ে থেকে থেকে কেমন যেন বোধ-বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছেবউ এর কথা নিয়ে জাবর কাটে সারাক্ষণজয়নালের এটা একদম পছন্দ নয়তাই বেলালকে কথা শেষ করতে না দিয়ে সে বলে
হে আবার কি কয় ? হের ত কাম একটাইএক ঘরের কতা আর এক ঘরে লাগাইয়া ফিরা
বেলাল গলার স্বরটা একটু নীচু করে বলে
না রে ভাইঐরহম কিছু নাএকটা কামের কতা কইছে তর ভাবিহের লাইগাই ত তর লগে পরামর্শ করতাম চাই
আচ্ছা, কইয়া ফালাও কি কামের কতা ভাবি কইছে
তর ভাবি কইছিল দক্ষিণ পাড়ার বড় বাড়ির ছেড়া রাজুর লগে আমার হাসির খুব ভাব অইছেআমি ত অচল মানুষ, বিছানায় পইরা আছিআমার সংসারের সব ভার ত তুই-ই মাথায় কইরা নিছসহের লাইগাই কইছিলাম দেখনা ঐ ছেড়াডার লগে আমার হাসির বিয়াডা দেওন যায় নাহি
মিয়াভাই, বিছানায় হুইতা থাকতে থাকতে তোমার মাথাডা দেহি এক্কেবারে গেছেগানাইলে তোমার মনে অয় কেমনে যে বড় বাড়ির ছেড়া আমরার ছেড়িরে বিয়া করব ?
অমন কইরা কইতাছস কেরে ভাই ? আমি অইলাম ছেড়ির বাপআমার ছেড়ির বালা ঘরে বিয়া অইব এইডা ভাবলে দোষডা কি ? হগল বাপেরই ত অমন আশা থাহেআমার হাসির মতন এমন রূপে-গুণে মাইয়া আশেপাশের গেরামে কয়ডা আছে তুই ক ত ?
মিয়াভাই, হেই হিসাব কইরা লাভ নাইগরীবের ঘরে রূপের জৌলসের কোন দাম নাইএই সমাজে রূপে-গুণের চাইতে জাত আর ট্যাহা-পইসার দাম অনেক বেশীআর আমরা অইলাম হেদের বাড়িত কামলা কাইটা খাওয়ুইনা মানুষআমরার জাগা হেরার পাওয়ের তলেহের চাইতে আমি কি কই হুনআমার হউর বাড়িত তে যে করমিডা আইছে হেইডা দেহ
কিন্তুক ঐহানেও ত এই সংসারের মতনই অবস্থাখাইয়া না খাইয়া আধাপেট খাইয়া বাইচা থাকতে অইব ছেড়িডারেবড় লোভ অয়রে ভাইছেড়িডা এই পোড়া সংসার তে বাইর অইয়া একটু সুহের মুখ দেহুকআইজ পর্যন্ত ত একটা বেলাও ওরে পেট ভইরা খাওন দিতাম পারি নাই
এর উত্তরে জয়নাল কিছু বলতে যাচ্ছিলএমন সময় বেলালের বউ রহিমার গলা শুনা যায়
হুনছুইন
বেলাল সাথে সাথে বিরক্ত হয়ে জবাব দেয়, হুনছিকি কইবি কদুই ভাইয়ে নিরিবিলিতে দুইডা কতা কইতাছি হেইডা তর সহ্য অইতাছে না
স্বামীর এ কথার সরাসরি কোন জবাব না দিয়ে রহিমা তার আগের কথার সূত্র ধরে বলে
আইজ কিন্তুক চুলা জ্বলবনা এইডা কইয়া রাখলাম
না জ্বললে না জ্বলবনা খাইয়া থাহুম
গলার স্বর চড়া করে জবাব দেয় বেলালতারপর ছোটভাইকে উদ্দেশ্য করে তেমনি চড়া গলায় বলে
দেখলি ? দেখলি তর ভাবীর কামডা ? খালি হগল সময় কানের কাছে নাই আর নাই প্যাঁচালহের ছেড়ির বালার লাইগা দুই ভাইয়ে নিরিবিলিতে একটু পরামর্শ করতাছি এইডা হের সহ্য অইতাছে নাফের ফেরানি শুরু কইরা দিছে
করতাছে কি আর সাধে ? তুমিই ত খাওনের লাইগা বেহের আগে তুফান চালাইবাযাওক গাআমি অহন ক্ষেতে যাইতোমরার ছোড বউরে কইয়া যাইতাছি ঘরে যা আছে হেই দিয়া এই বেলাডা যেন ভাগাভাগি কইরা চালাইয়া নেয়পরে দেহুমনে কি করন যায়
কথা শেষ করে আর সেখানে দেরী করেনা জয়নালদ্রুত পা চালায় ক্ষেতের দিকেওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে বেলাল ভাবে, এহন ত তাও আধপেটা খাওন প্রত্যেক বেলা জুটতাছেজয়নাল যদি হাল না ধরত তাইলে ত তাও জুটতনাকি রোগে যে ধরল ! আমার কামলা খাডা শরীলডারে একেবারে বিছানায় ফালাইয়া দিল আজীবনের লাইগাঅহন আমার বউ-পোলাপানের খাওনের ভারডাও গিয়া পড়ছে জয়নালের ঘাড়েদুনিয়াতে কয়ডা ভাই তার ভাইয়ের সংসারের লাইগা অত করে ?
বেলালের ভাবনার মাঝখানে হাসি এসে সেখানে উপস্থিত হয়একহাতে গ্লাসভর্তি পানি আর এক হাতে ঔষধচৌকির উপর বেলালের পাশে বসতে বসতে হাসি বলে
বাজান, আইজ বেইন্যা বেলার অষুদ খাও নাই তুমিএই লও
বেলাল হাত বাড়িয়ে মেয়ের হাত থেকে ঔষুধ নিতে নিতে বলে, অষুদ খাইয়া আর কি অইব রে মা ? শরীলডা কি আর উইঠা খাড়াইব ?
হেইডা তোমার চিন্তা করন লাগবনাঅহন তাড়াতাড়ি খাইয়া লওআমার বইয়া থাহনের সময় নাই
সময় নাই কেরে রে মা ? অত তাড়াতাড়ি করতাছস কেরে ? এই অসুইখা বাপডার কাছে একটু না অয় বইয়া থাকলি
বেলালের কথায় হাসি সাথে সাথে জবাব দেয়
বাজান, বুঝতাছ না কেন ? আমার আতে অহন মেলা কামবইয়া থাহনের সময় নাই
মেয়ের কথায় বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বেলাল  বলে
, হেইডাও ত ঠিকআমি অইলাম তর অকর্মা বাপবিয়ার লায়েক মাইয়ারে বিয়া না দিয়া মাইনষের বাড়িত কামে পাডাই
বাবার কথায় হাসির বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠেসে সাথে সাথে বলে
বাজান, তোমারে না কতদিন কইছি এইসব কথা ভাইবা মন খারাপ করবানাআমি মেয়ে অইছি ত কি অইছে ? আল্লায় আমারেও চাইরডা হাত-পাও দিছে, চোখ-কান দিছেতাইলে আমি তোমারে কাম কইরা খাওয়াইলে দোষটা কোনহানে ?
না রে মা, দোষ আমরার কেউর নাদোষ আমার কপালের
এ কথায় দুজনই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেতারপর বেলাল জিজ্ঞেস করে
আউজগা কোন বাড়িত যাইতাছস কামে ?
হাসি উত্তর দেয়, উত্তর বাড়ির বড় জেডি কয়ডা খড়ি ছিইরা দিতে কইছেদেহি গিয়াযদি কয়ডা চাইল-ডাইল দেয় তাইলে এই বেলা চইলা যাইবচাচা আর কত করব আমরার লাইগা কও ত বাজান ? হেইলারও ত একটা সংসার আছে
হাসির এই প্রশ্নের উত্তর বেলালের কাছে নেইসে চুপ করে থাকেউঠে চলে যায় হাসিবেলাল সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে
সেয়ানা মাইয়া ! আতে মেনদি-চুড়ি পইরা বিয়ার স্বপন দেহনের কতাহেইডা না কইরা হেরে করতে অইতাছে খড়ি ছিরনের কামআর আমি ঘরে বইয়া থাইকা এই কামাই খাইতাছিহায়রে আমার কপাল ! এমন অধম বাপেরে দুনিয়াতে বাঁচাইয়া রাহনের কি কাম তুমিই জানো আল্লা
নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে মনের ভিতর হতাশার ঘূর্ণিপাক বেলালের নতুন নয়দিনের পর দিন এই হতাশা বেলালকে কুরে কুরে খাচ্ছেতার সাথে আজকাল যোগ হয়েছে হাসির বিয়ের চিন্তাহাসিকে চোখের সামনে দেখলেই যেন এই চিন্তাটা বেলালের মাথার ভিতর দাবানলের মতো উত্তাপ ছড়াতে থাকেকিন্তু আজ একটু আগে হাসি তার সামনে থেকে উঠে যাবার পর মনের ভিতর উঁকি মারে আর একটি চিন্তাসাথে সাথে বেলালের মনের ভিতরের পূঞ্জীভূত হতাশা রূপ নেয় একগুচ্ছ সুখের আমেজেবেলাল ভাবে, রাজুর লগে বিয়াডা অইয়া গেলেই হাসির সব কষ্ট দূর অইয়া যাইবআমার হাসির ভাত-কাপড়ের আর কোন অভাব অইবনাসুখে থাকব আমার হাসিইয়া আল্লা, আমার কাছ তে যা নেওনের তুমি কাইরা নিছএর বিনিময়ে আমার হাসির দিহে একটু মুখ তুইলা চাও আল্লা
অদৃশ্য শক্তির প্রতি মেয়ের ভাগ্য পরিবর্তনের আরজি পেশ করার সাথে সাথে মনের ভিতর একটু প্রশান্তি অনুভব করে বেলালকিন্তু বেলালের এই সুখের আমেজ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নাজয়নালের ছেলে মবিন দৌড়ে এসে খবর দেয়
জেডা, দক্ষিণ পাড়ার বড় মিয়া আমরার গোয়াইদ্বরে খাড়াইয়া রইছে
কছ কি ? যা যা, তর বাপেরে গিয়া অহনই ডাইকা আনআর হুন, যাওনের আগে একটা বওন দিয়া যা বড় মিয়ারে
মবিন দৌড়ে বেরিয়ে যায় তার বাবাকে ডাকতেবেলাল তার চলৎশক্তিহীন শরীরটা নিয়ে কি করবে ভেবে পায়নাতার শরীর-মনজুড়ে সুখের বান ডাকতে শুরু করেছেকিন্তু ৬ হাত বাই ৮ হাত চৌকির ফ্রেমে বন্দী থেকে এই সুখকে কিভাবে উপভোগ করবে ভেবে পায়না বেলালমা-মেয়ে কেউই বাড়ি নেই যে তাদের সাথে দুটো কথা বলবেতাই বিধাতার উদ্দেশ্যে তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বেলাল
ইয়া আল্লা, তুমি আছতুমি আছএই অথর্ব লোকটার ডাক তুমি হুনছনা অইলে বড় মিয়া আমার বাড়িত আইব কেন ?
মনে মনে আরও কিছু হয়তো বলত বেলালকিন্তু তার চিন্তার স্রোত সেখানেই থেমে যায় বাইরে থেকে ভেসে আসা প্রচন্ড হুংকারের শব্দেবড় মিয়ার গলা চিনতে ভুল হয়না বেলালের
তরার অত বাইর বাড়ছেআমার রাজুর লগে তর ভাইস্তি ভাব লাগাইছেতরার পেডের ভিতর আমার বাড়ির ভাত কথা কয়আর তরার ছেড়ি কি-না স্বপন দেহে আমার রাজুর লগে বিয়ার
এই ফাঁকে জয়নালের মিনমিনে গলা একটু শুনা গেলেও মুহূর্তেই তা চাপা পড়ে যায় বড় মিয়ার চড়া গলার নীচেবড় মিয়া আবার বলে
হুন জয়নালতরে কইয়া যাইতাছিতর ভাইস্তিরে সামলানাইলে কিন্তুক খুব খারাপ অইবতরা অইছস কামলার কামলাতর চৌদ্দ পুরুষ আমার বাড়িত কামলা কাইটা খাইছেআর তরা অহন আমার ইজ্জতের জাগায় হাত দিছসতর ভাইরে কইয়া দিছ জয়নালহাসি যদি এরপর আমার রাজুর লগে ভাব রাহনের চেষ্টা করে তাইলে কিন্তু ফল খুব খারাপ অইবআমি এই গেরাম তে তরার বাস উডাইয়া দিবাম কইলাম
আর দাঁড়ায়না বড় মিয়া সেখানেযে পথে এসেছিল সে পথ ধরে হন হন করে হেঁটে চলে যায়জযনাল বড় মিয়ার মাড়িয়ে যাওয়া পথের দিকে কিছুক্ষণ নির্বাক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকেতারপর রাগে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে ঢুকে বেলালের ঘরেএতক্ষণের অবরুদ্ধ ক্রোধ এবার প্রচন্ড এক ধাক্কায় বেরিয়ে আসেগজরাতে গজরাতে জয়নাল বলে
কইছিলাম না ? বামন অইয়া চাদে আত দিওনাআমরা অইলাম কামলার কামলাআমরা ইচ্ছা করলেই স্বপন দেখতে পারিনা
বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে ফেলে জয়নালছোট ভাইয়ের কান্না দেখে বেলালের বুকের ভিতরটাও হু হু করে উঠেবলে, আয় ভাইআমার কাছে আইয়া একটু ব
জয়নাল কোন কথা না বলে বেলালের পাশে চৌকির উপর এসে বসে পড়েবেলাল ওর মাথায় স্নেহের হাত বুলাতে বুলাতে বলে
যে অপমানডা আমার পাওনের কতা আছিল হেইডা তরে ভোগ করতে অইতাছেতুই ঠিকই কইছিলি রে জয়নালআমরার মতন হতভাগা মানুষের সুখের স্বপন দেহা পাপআমি হাসিরে বুঝাইয়া কইবামতর হউর বাড়ির দেশ থাইকা যে করমিডা আইছে হেইডা দেখআমি ঐহানেই আমার হাসিরে বিয়া দিবামঐহানে ভাত-কাপড়ের সুখ না পাওক, নিজের বাপ-চাচার মান রাইখা মাথা উঁচু কইরা বাঁচব আমার হাসিএইডাই আমার সুখএহন আমি বুঝতাছি খাওন-পরনের সুখের থাইকা মানের সুখ অনেক বড়