WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

Monday, November 12, 2012


অক্সিজেন, শস্যদানা, তারপরই প্রেম
নান্দাইল নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজের সাক্ষাৎকার নেন জনপ্রিয় টিভি তারকা শমী কায়সারনান্দাইল নিউজের পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো

শমী কায়সার : `এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়...` এ কবিতা যখন আপনি লিখেছিলেন তখন আপনার কি চিন্তা কাজ করছিল, কবিতার প্রেক্ষাপট কি ছিল?

হেলাল হাফিজ: তখন আমি কবিতার নেশায় মগ্ন একজন মানুষআমি একদিন পুরান ঢাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফিরছি, যখন ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে [বর্তমান বঙ্গবাজার মার্কেটের দক্ষিণ পাশে] পৌঁছলাম, হঠাৎ দেখলাম ইপিআর [তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট] এবং মিছিলকারীদের মধ্যে `ঢিলাঢিলি` হচ্ছেবেশকিছু মিছিলকারীকে ইপিআর সদস্যরা বেদম পেটাচ্ছেআমার রিকশার পাশ দিয়ে মধ্যবয়সী এক রিকশাওয়ালা যাচ্ছিলেন; ওই দৃশ্য দেখে রিকশাওয়ালা রিকশাটা একটু স্লো করলেন এবং নিজ অন্তর থেকে বললেন, `ওই [মিছিলকারী] মার মার ওদেরকে [ইপিআর] মার` রিকশাওয়ালার দেশপ্রেমে এত শক্তি ছিল যেন মার্ডার করাও জায়েজআমি এমনিতেই এ অবস্থায় চিন্তায় ছিলাম তখন এ কথাটি আমার মন এবং মগজে এমনভাবে রচিত হলো, কথাটি মনে করলে আজও আমার শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়, মনে শিহরণ জাগে

আমার এ কবিতা সম্পর্কে আমি ছোট্ট ছোট্ট তিনটা তথ্য দেবক. লেখক হুমায়ুন কবীর এবং আহমদ ছফা ভাই একদিন আমাকে নিয়ে কবি আহসান হাবীবের কাছে গেলেন; হাবীব ভাই তখন `দৈনিক পাকিস্তান`-এর সাহিত্য সম্পাদকআমার কবিতাটি হুমায়ুন কবীর হাবীব ভাইকে দিলেনহাবীব ভাই কবিতাটি দেখে বললেন, ও তো ছোট মানুষ, আমি কবিতাটি ছাপতে পারলাম না বলে দুঃখিততবে হেলালের কবিতার অমরত্ব নিশ্চিতখ. বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে আমার এ দুটি পঙক্তি উৎকীর্ণ করা হয়গ. এ কবিতাটি উচ্চকণ্ঠের কবিতাতাই এটি `বোয়াল মাছ` হয়ে গেছেআমার অনেক কোমলমতি কবিতাকে এটি গিলে ফেলেছে

[কথা প্রসঙ্গে হেলাল হাফিজ শমী কায়সারকে বলেন, `তুমি একসময় ছোটদের অনুষ্ঠান করেছ, তারপর নাটকে এলে, তারপর এখনো তুমি তারকা শমী কায়সারএতে আমি খুবই আনন্দিততোমার খালা খালেদ এদীব চৌধুরী এবং আমি পূর্বদেশে পাশাপাশি টেবিলে বসে কবিতা লিখতাম, সেই সূত্রে তোমার মা পান্না কায়সার প্রায়ই সেখানে যেতেনআমি একদিন ঠাট্টা করে তোমার খালাকে বললাম, আমি তো তিনজনের প্রেমে পড়ে গেছি।]`

শমী কায়সার: আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে?

হেলাল হাফিজ: আমি তো জন্মেছি নেত্রকোনায়আমার শৈশব, কৈশোর এবং প্রথম যৌবন নেত্রকোনায় কেটেছেআমি খুব ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছিমাত্র তিন বছর বয়সে মা মারা যায়আমার বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার নিজে কবি ছিলেনআবার ধর্মকর্ম করতেনতার ৮-১০টা বিভিন্ন রঙের পাগড়ি ছিলপাগড়ি পরতে তিনি পছন্দ করতেনএ জন্য আমার স্কুল শিক্ষক বাবার নামই হয়ে গিয়েছিল `পাগড়িওয়ালা স্যার`তাকে সবাই পাগড়িওয়ালা স্যার নামেই চিনত

শমী কায়সার: আপনি ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত নেত্রকোনায় কাটিয়েছেনতারপর কোথায় ভর্তি হলেন?

হেলাল হাফিজ: আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইআমি কখনো কবি হবো এ কথা ভাবিনিআমি ছিলাম খেলাধুলার মানুষআমি ফুটবল, ব্যাটমিন্টন এসব খেলতামস্কুলে থাকাবস্থায় আমি লন টেনিস খেলা শিখেছিকলেজ জীবন থেকে কবিতায় জড়িয়ে পড়িকারণ মাতৃহীনতার বেদনা আমার মনে হয় খেলাধুলা দিয়ে প্রশমিত হচ্ছে না

শমী কায়সার: আপনি এই যে ২৬ বছর পর [কাব্যগ্রন্থ] বের করলেন, এটা কি কোনো অভিমান থেকে?

হেলাল হাফিজ: একটা কারণ হলো আমি কম প্রতিভাবান, আরেকটি হলো এই কবিতার জনপ্রিয়তা আমাকে আতঙ্কিত করেআর তুমি যে দিকটা ইঙ্গিত করছ সে ক্ষেত্রে `মান-অভিমান` কিছু তো থাকেই

শমী কায়সার: প্রেম, ভালোবাসা বিরহ এগুলোকে কীভাবে দেখেন বা কীভাবে এ অনুভূতিগুলোকে ব্যক্ত করেন?

হেলাল হাফিজ: একেবারে চুম্বক দুটি বাক্য দিয়ে আমি আমার প্রেমের কথা বুঝিয়ে দেবআমার কাছে অক্সিজেন, শস্যদানা, তারপরই প্রেম, তারপর কবিতাপ্রেম মানেই কিন্তু নারী-পুরুষের প্রেম নয়

তাজমহল নিয়ে তোমাকে [শমী কায়সার] চমৎকার একটি কথা বুঝিয়ে দেবপৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্তএক ভাগে আছে যারা তাজমহল দেখেছে, আর এক ভাগে আছে যারা তাজমহল দেখেনি

প্রেম, ভালোবাসা নিয়ে কথা বললে, আমার একটি কথা বলতে ইচ্ছা করছে_ তুমি [শমী কায়সার] তো বুঝতে পারছ আমার প্রেম অপূর্ণ

আমাদের পুরুষশাসিত সমাজ তো! কথাটা তো এমন হতে পারত--তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ, চাচা আপনি এত সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখলেন, কিন্তু কোনো নারী কেন আপনাকে গ্রহণ করল না? এমন তো হতে পারে, আমি চেয়েছিলাম আর তোমাদের [নারী] কেউ আমাকে গ্রহণ করেনিআচ্ছা, প্রেমের পরিণয়ের যে পরিণতি এটাকে তুমি কীভাবে দেখ? এটা কি একেবারে অপরিহার্য মানবজীবনে?

হেলাল হাফিজের প্রশ্নের উত্তরে শমী কায়সার বললেন, একেক জন আসলে এক অনুভূতিকে একেকভাবে প্রকাশ করেআমি বিয়ে বিষয়টিকে এভাবে দেখি যে, `বিয়ে করার জন্য বিয়ে` এ বিষয়টিকে আমি ঠিক মনে করি নাবিয়ের মধ্যে নর-নারী তাদের নিজেদের নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারেএকই সঙ্গে সেখানে প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, শ্রদ্ধাবোধ, রাগ, কান্না, অশ্রু সবই থাকে, সেখানে বাস্তবতার সঙ্গে নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন হয়আমার যত বছর বিবাহিত জীবন, মনে হয়, বিয়েতে একধরনের কম্প্রোমাইজও আছেহেলাল হাফিজ সুরে সুর মিলিয়ে `ম্যারেজ ইজ এ ডিল অব কম্প্রোমাইজ

অবশেষে হেলাল হাফিজের প্রিয় প্রতিমা, কবিতা পাঠ শেষ হয়

(বাংলাদেশ প্রতিদিনের সৌজন্যে)